July 2019 - All About Technology! "

All About Technology!

All About Technology! A complete guide to latest technology and science.

Thursday, July 25, 2019

নজরুল সংক্ষেপ!

July 25, 2019 0
১৩০৬ সালের ১১ই জ্যৈষ্ঠ, বুধবার, ২৪শে মে ১৮৯৯ সালে (১৩ মহর্‌রম ১৩১৭ হিজরি) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম। পিতামহ কাজী আমিনুল্লাহ। মাতামহ তোফায়েল আলী। পিতা কাজী ফকির আহমদ। মাতা জাহেদা খাতুন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কাজী সাহেবজান। কনিষ্ঠ ভ্রাতা কাজী আলী হোসেন। ভগ্নী উম্মে কুলসুম। নজরুলের ডাক-নাম ছিল দুখু মিয়া। ছেলেবেলায় তিনি ‘তারা ক্ষ্যাপা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। পরে ‘নুরু’ নামও তিনি ব্যবহার করেছেন। অনেকে তাঁকে ‘নজরআলি’ নামেও ডাকতেন।
    ১৯০৪
বেনেপাড়ার বিনোদ চাটুজ্জের পাঠশালায় কিছুদিন পড়ে নজরুল গ্রামের মক্তবে লেখাপড়া শুরু করেন। এখানে তিনি কোরআন পাঠ আয়ত্ত করেন। মক্তবে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষার প্রথম পাঠ লাভ করেছিলেন মৌলবি কাজী ফজলে আলীর কাছে। পরে বিশেষ করে ফারসি শেখেন তাঁর চাচা কাজী বজলে করিমের (নজরুলের পিতামহ কাজী আমিনুল্লাহর কনিষ্ঠ ভ্রাতা কাজী নাজিবুল্লাহর পুত্র) কাছে।
    ১৯০৮
পিতা কাজী ফকির আহমদের মৃত্যু (১৩১৪ সালের ৭ই চৈত্র)
    ১৯০৯
গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পাশ, মক্তবে শিক্ষকতা, মাজারের খাদেম, লেটো দলের সদস্য ও পালাগান ইত্যাদি রচনা।
    ১৯১০
রানিগঞ্জ সিয়ারশোল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন।
সাহিত্যকৃতি :
‘চাষার সঙ’, ‘ঠাকুরের সঙ’, ‘রাজা যুধিষ্ঠিরের পালা’, ‘শকুনি বধ’, ‘মেঘনাদ বধ’, ‘দাতা কর্ণ’, ‘বিদ্যাভূতুম’, ‘রাজপুত্রের সঙ’, ‘কবি কালিদাস’, ‘আকবর বাদশা’ ইত্যাদি পালাগান রচনা।
    ১৯১১
বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার মাথ্‌রুন গ্রামে মাথরুন নবীনচন্দ্র ইন্সটিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি দুই বছর লেখাপড়া করেন। কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক ছিলেন এই স্কুলের শিক্ষক।
    ১৯১২
স্কুল ত্যাগ, বাসুদেব কবিয়ালের কবিদলের সঙ্গে সম্পর্ক।
  ১৯১২ - ১৩
আসানসোল ছেড়ে ঘটনাচক্রে চলে আসেন প্রসাদপুরে। সেখানে বর্ধমানের অন্ডাল ব্রাঞ্চ রেলওয়ের বাঙালি খ্রিস্টান গার্ড সাহেবের খানসামা। পরে আসানসোলে এম. এ. বখ্‌শের চা রুটির দোকানে চাকুরি, আসানসোলে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর ময়মনসিংহের কাজী রফিজউল্লাহ ও তাঁর পত্নী শামসুন্নেসা খানমের স্নেহ লাভ।
    ১৯১৪
কাজী রফিজউল্লাহর সহায়তায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের কাজীরসিমলা, দরিরামপুর গমন এবং দরিরামপুর স্কুলের সপ্তম শ্রেণির অবৈতনিক ছাত্র। সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে ময়মনসিংহ ত্যাগ করে চুরুলিয়ায় ফিরে যান।
  ১৯১৫ - ১৭
রাণিগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব। পড়াশোনায় ভালো হওয়ার জন্য রাজবাড়ি থেকে মাসিক ৫টাকা বৃত্তি পান। এই স্কুলের শিক্ষক ও যুগান্তর দলের গোপন বিপ্লবী নিবারণচন্দ্র ঘটক নজরুলের মধ্যে স্বাধীনতা ও বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার করেছিলেন। প্রিটেস্ট পরীক্ষার আগে সেনাবাহিনীর ৪৯নং বাঙালি পল্টনে যোগদান। সেপ্টেম্বরে হাওড়া স্টেশন থেকে একটা বড় দলের সঙ্গে লাহোরের পথে যাত্রা করেন।
সাহিত্যকৃতি :
সিয়ারশোল রাজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৌলবি আবদুল গফুরের বিদায় উপলক্ষ্যে বিদায়-কাব্যবাণী রচনা করেন (১১ এপ্রিল ১৯১৬)। ‘করুণ গাথা’ নামে বিদায়-কাব্যবাণী রচনা করেন (১৩ জুলাই ১৯১৬) প্রবীণ শিক্ষক ভোলানাথ কর্মকারের বিদায় উপলক্ষ্যে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্থানীয়ভাবে জানা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ১০৬চরণের ‘ক্ষমা’ নামে দীর্ঘ কবিতা লেখেন (পরে মুজফ্‌ফর আহমদ ‘মুক্তি’ নামে সেটি প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-পত্রিকায় ১৯১৯-এ; এটিই নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কবিতা)। এই স্কুলে পড়ার সময়েই ‘চড়ুই পাখির ছানা’ কবিতাটিও রচনা করেন। চুরুলিয়ায় প্রচলিত লোককথা অবলম্বনে ‘রাজার গড়’ (পরে ‘ভগ্নস্তূপ’ নামে পল্লীশ্রী পত্রিকার আশ্বিন ১৩২৯ সংখ্যায় প্রকাশিত) ও ‘রানির গড়’ নামে দুটি কবিতা লেখেন।
  ১৯১৭ - ১৯
সৈনিক জীবন, প্রধানত, করাচিতে গন্‌জা/গাজা বা আবিসিনিয়া লাইনে অতিবাহিত, ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার পদে উন্নতি, সাহিত্যচর্চা। করাচিতে অবস্থানকালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার তদানীন্তন সহ-সম্পাদক মুজফ্‌ফর আহমদের সঙ্গে নজরুলের পত্রালাপ হয়। প্রাণচঞ্চল স্বভাবের জন্যও সেনাবাহিনীতে নজরুল ‘হৈ হৈ কাজী’ নামে পরিচিত ছিলেন।
সাহিত্যকৃতি :
‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ গল্প (সওগাত, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সংখ্যা, মে ১৯১৯; পরে রিক্তের বেদন গল্পগ্রন্থে সংকলিত); ‘মুক্তি’ কবিতা (বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-পত্রিকা, শ্রাবণ ১৩২৬; পরে নির্ঝর কাব্যগ্রন্থে সংকলিত; এই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পরে পত্রিকার সম্পাদককে নজরুল করাচি সেনানিবাস থেকে একটি চিঠি লেখেন যা সাপ্তাহিক সওগাত পত্রিকার ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫ সংখ্যায় ‘একখানি পুরাতন চিঠি’ শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়); ‘স্বামীহারা’ গল্প (সওগাত, ভাদ্র ১৩২৬; পরে রিক্তের বেদন গল্পগ্রন্থে সংকলিত), ‘কবিতা-সমাধি’ কবিতা (সওগাত, আশ্বিন ১৩২৬), ‘তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা’ প্রবন্ধ (সওগাত, কার্তিক ১৩২৬), ‘হেনা’ গল্প (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, কার্তিক ১৩২৬; পরে ব্যথার দান গল্পগ্রন্থে সংকলিত), ‘আশায়’ কবিতা (হাফিজের কবিতার অনুবাদ; প্রবাসী, পৌষ ১৩২৬; পরে নির্ঝরকাব্যগ্রন্থে সংকলিত)। করাচিতে থাকার সময় ‘বাঁধনহারা’ পত্রোপন্যাসের অনেকটা অংশ লেখেন।
    ১৯২০
মার্চ মাসে সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যাবর্তন, বঙ্গীয়-মুসলমান-সাহিত্য-সমিতির ৩২নং কলেজ স্ট্রিটস্থ দফ্‌তরে মুজফ্‌ফর আহমদের সঙ্গে অবস্থান। কলকাতায় সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু।
সাংবাদিক জীবন, মে মাসে এ. কে. ফজলুল হকের সান্ধ্য-দৈনিক নবযুগপত্রিকায় যুগ্ম-সম্পাদক পদে যোগদান, নজরুল ও মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের ৮-এ টার্নার স্ট্রিটে অবস্থান, সেপ্টেম্বর মাসে নবযুগ পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত এবং নজরুল ও মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের বরিশাল ভ্রমণ, নবযুগ-এর চাকুরি পরিত্যাগ, বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘর গমন।
সাহিত্যকৃতি :
‘মেহের-নেগার’ গল্প (নূর, মাঘ ১৩২৬; পরে রিক্তের বেদন গল্পগ্রন্থে সংকলিত), ‘ব্যথার দান’ গল্প (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, মাঘ ১৩২৬; পরে ব্যথার দান গল্পগ্রন্থে সংকলিত), ‘ঘুমের ঘোরে’ গল্প (নূর, ফাল্গুন-চৈত্র ১৩২৬; পরে ব্যথার দান গল্পগ্রন্থে সংকলিত), বাঁধনহারা উপন্যাসের ধারাবাহিক প্রকাশ শুরু শান্তিপুরের খ্যাতিমান কবি মোজাম্মেল হক সম্পাদিত মোসলেম ভারত পত্রিকায়, ‘রিক্তের বেদন’ গল্প (নূর, বৈশাখ ১৩২৭; পরে রিক্তের বেদন গল্পগ্রন্থে সংকলিত), ‘প্রিয়ার দেওয়া শরাব’ (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২৭), ‘মানিনী বধূর প্রতি’ কবিতা (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২৭; পরে ‘মানিনী’ শিরোনামে পূবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থে সংকলিত), ‘জননীদের প্রতি’, ‘পশুর খুঁটিনাটি বিশেষত্ব’ ও ‘জীবন-বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২৭), ‘উদ্বোধন’ গান (সওগাত, বৈশাখ ১৩২৭; পরে বিষের বাঁশী কাব্যগ্রন্থে সংকলিত), ‘চিঠি’ কবিতা (বঙ্গনূর, বৈশাখ ১৩২৭; পরে ঝিঙেফুল-এ সংকলিত), ‘কালোর উকিল’ (নূর, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৭), ‘বোধন’ গান (মোসলেম ভারত, জ্যৈষ্ঠ ১৩২৭; পরে বিষের বাঁশি কাব্যগ্রন্থে সংকলিত), মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় বিবিধ রচনা প্রকাশ।
    ১৯২১
দেওঘর থেকে প্রত্যাবর্তন, ‘মোসলেম ভারতের’ সম্পাদক আফজাল-উল-হকের সঙ্গে ৩২নং কলেজ স্ট্রিটে অবস্থান, পুনরায় ‘নবযুগে’ যোগদান।
এপ্রিল মাসে আলী আকবর খানের সঙ্গে কুমিল্লা গমন, কান্দির পাড়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত ও বিরজাসুন্দরী দেবীর আতিথ্য গ্রহণ, আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুর গমন ও দুই মাস দৌলতপুর অবস্থান, আলী আকবর খানের ভাগিনেয়ী সৈয়দা খাতুনি ওরফে নার্গিস আসার খানমের সঙ্গে ১৩২৮ সালের ২রা আষাঢ় তারিখে বিবাহ। কুমিল্লা থেকে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের পরিবারের সকলের বিবাহে যোগদান, বিবাহের রাত্রেই নজরুলের দৌলতপুর ত্যাগ ও পরদিন কুমিল্লা গমন এবং অবস্থান। কলকাতায় বিবাহ-সংক্রান্ত গোলযোগের বার্তা প্রেরণ। জুলাই মাসে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের সঙ্গে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর হয়ে কলকাতা প্রত্যাবর্তন, ৩/৪সি তালতলা লেনের বাড়িতে অবস্থান, অক্টোবর মাসে অধ্যাপক (ডক্টর) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র সঙ্গে শান্তনিকেতন ভ্রমণ ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ। নভেম্বর মাসে পুনরায় কুমিল্লা গমন, অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ। কলকাতায় প্রত্যাবর্তন। ডিসেম্বরের শেষ দিকে কলকাতায় তালতলা লেনের বাড়িতে বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ রচনা। ‘বিদ্রোহী’ সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ ও মাসিক ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় ছাপা হলে প্রবল আলোড়ন।
    ১৯২২
চার মাস কুমিল্লা অবস্থান, আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলার সঙ্গে সম্পর্ক। মার্চ মাসে প্রথম গ্রন্থ ‘ব্যথার দান’ প্রকাশ। ২৫শে জুন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যু, রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক সভায় যোগদান, সত্যেন দত্ত সম্পর্কে রচিত শোক-কবিতা পাঠ। দৈনিক ‘সেবকে’ যোগদান ও চাকুরি পরিত্যাগ। ১২ই আগস্ট অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ প্রকাশ, ধূমকেতুর জন্যও রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ধূমকেতুতে ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশ, অক্টোবর মাসে ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য ও ‘যুগবাণী’ প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ, ‘যুগবাণী’ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত, ধূমকেতুতে প্রকাশিত ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ বাজেয়াপ্ত, নভেম্বর মাসে নজরুলকে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে আটক। ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাতেই নজরুল প্রথম ভারতের জন্যও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেছিলেন ১৩ই অক্টোবর ১৯২২ সংখ্যায়।
সাহিত্যকৃতি :
ব্যথার দান, অগ্নিবীণা
    ১৯২৩
জানুয়ারি মাসে বিচারকালে নজরুলের বিখ্যাত ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ আদালতে উপস্থাপন, এক বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড, আলিপুর জেলে স্থানান্তর, নজরুলকে রবীন্দ্রনাথের ‘বসন্ত’ গীতিনাটক উৎসর্গ, হুগলি জেলে স্থানান্তর, মে মাসে নজরুলের অনশন ধর্মঘট, শিলং থেকে রবীন্দ্রনাথের টেলিগ্রাম, ‘Give up hunger strike, our literature claims you’, বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে অনশন ভঙ্গ, জুলাই মাসে বহরমপুর জেলে স্থানান্তর, ডিসেম্বরে মুক্তিলাভ।
    ১৯২৪
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের মেদিনীপুর শাখার একাদশ বার্ষিক অধিবেশনে যোগদান। মিসেস এম রহমানের উদ্যোগে এপ্রিলে প্রমীলার সঙ্গে বিবাহ, হুগলিতে নজরুলের সংসার স্থাপন, অগাস্টে ‘বিষের বাঁশি’ ও ‘ভাঙার গান’ প্রকাশ ও সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত, শনিবারের চিঠিতে নজরুল-বিরোধী প্রচারণা। হুগলিতে নজরুলের প্রথম পুত্র আজাদ কামালের জন্ম ও অকালমৃত্যু।
    ১৯২৫
মে মাসে কংগ্রেসের ফরিদপুর অধিবেশনে যোগদান। এই অধিবেশনের গুরুত্ব, মহাত্মা গান্ধি এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের যোগদান। জুলাই মাসে বাঁকুড়া সফর, ‘কল্লোল’ পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক, ডিসেম্বর মাসে নজরুল ইসলাম, হেমন্তকুমার সরকার, কুতুবউদ্দীন আহ্‌মদ ও শামসুদ্দিন হোসায়ন কর্তৃক ভারতীয় কংগ্রেসের অন্তর্গত, মজুর স্বরাজ পার্টি গঠন। ডিসেম্বরে শ্রমিক প্রজা স্বরাজ দলের মুখপত্র ‘লাঙ্গল’ প্রকাশ, প্রধান পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম। ‘লাঙ্গল’-এর জন্যেও রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী। ‘লাঙ্গল’ বাংলা ভাষায় প্রথম শ্রেণিসচেতন পত্রিকা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু ১৬ই জুন। কবিতাসংকলন ‘চিত্তনামা’ প্রকাশ।
    ১৯২৬
জানুয়ারি থেকে কৃষ্ণনগরে বসবাস। মার্চ মাসে মাদারিপুর নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মেলনে যোগদান। এপ্রিল মাসে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত। এপ্রিলে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও হিন্দু-মুসলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা। রবীন্দ্রনাথকে ‘চল চঞ্চল বাণীর দুলাল’, ‘ধ্বংস পথের যাত্রীদল’ এবং ‘শিকল-পরা ছল’ গান শোনান। মে মাসে কৃষ্ণনগরে কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কিষাণ সভায় ‘কৃষাণের গান’ ও ‘শ্রমিকের গান’ এবং ছাত্র ও যুব সম্মেলনে ‘ছাত্রদলের গান’ পরিবেশন। জুলাই মাসে চট্টগ্রাম, অক্টোবর মাসে সিলেট এবং যশোর ও খুলনা সফর। সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় পুত্র বলবুলের জন্ম। আর্থিক অনটন। ‘দারিদ্র্য’ কবিতা রচনা। নভেম্বর মাসে পূর্ববঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় আইন সভার উচ্চ পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পরাজয় বরণ। ডিসেম্বর থেকে গজল রচনার সূত্রপাত, ‘বাগিচায় বুলবুলি’, ‘আসে বসন্ত ফুলবনে’, ‘দুরন্ত বায়ু পুরবইয়াঁ’, ‘মৃদুল বায়ে বকুল ছায়ে’ ইত্যাদি রচনা। ‘খালেদ’ কবিতা রচনা। নজরুলের ক্রমাগত অসুস্থতা।
    ১৯২৭
ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সফর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান ও ‘খোশ আমদেদ’ গানটি পরিবেশন, ‘খালেদ’ কবিতা আবৃত্তি।
বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক দলের কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য নির্বাচিত। কৃষক ও শ্রমিক দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘গণবাণী’ (সম্পাদক মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ)-র জন্যে এপ্রিল মাসে ‘ইন্টারন্যাশনাল’, ‘রেড ফ্লাগ’ ও শেলির ভাব অবলম্বনে যথাক্রমে ‘অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত’, ‘রক্ত-পতাকার গান’ ও ‘জাগর তূর্য’ রচনা। জুলাই মাসে ‘গণ-বাণী’ অফিসে পুলিশের হানা। আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কিত বাদ-প্রতিবাদ। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী, নজরুল, সজনীকান্ত দাস, মোহিতলাল মজুমদার, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রমুখ সাহিত্যিক এবং প্রবাসী, শনিবারের চিঠি, কল্লোল, কালিকলম প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় বিতর্ক। ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্সি কলেজে রবীন্দ্র পরিষদে রবীন্দ্রনাথের ভাষণ, ‘সাহিত্যে নবত্ব’ প্রবন্ধ এবং নজরুলের প্রবন্ধ ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’, ‘রক্ত’ অর্থে ‘খুন’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক। বিতর্কের অবসানে প্রমথ চৌধুরীর ‘বাংলা সাহিত্যে খুনের মামলা’ প্রবন্ধ।
‘ইসলাম দর্শন’, ‘মোসলেম দর্পণ’ প্রভৃতি রক্ষণশীল মুসলমান পত্রিকায় নজরুল সমালোচনা। ইব্‌রাহীম খান, কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, আবুল হোসেনের নজরুল-সমর্থন।
    ১৯২৮
ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় মুসলমান সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান, এই সম্মেলনের উদ্বোধনী সঙ্গীতের জন্যে ‘নতুনের গান’ রচনা। ঢাকায় অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র, অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত, মিস্‌ ফজিলতিন্নেসা, প্রতিভা সোম, উমা মৈত্র প্রমুখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। মে মাসে নজরুলের মাতা জাহেদা খাতুনের এন্তেকাল।
সেপ্টেম্বর মাসে কলিকাতা ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে শরৎ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দিলীপকুমার রায়, সাহানা দেবী ও নলিনীকান্তের সঙ্গে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশনা।
অক্টোবরে ‘সঞ্চিতা’ প্রকাশ। ‘মোহাম্মদী’ পত্রিকায় নজরুল বিরোধিতা। ‘সওগাত’ পত্রিকার নজরুল সমর্থন। ডিসেম্বর মাসে নজরুলের রংপুর ও রাজশাহি সফর।
কলকাতায় নিখিল ভারত কৃষক ও শ্রমিক দলের সম্মেলনে যোগদান। নেহেরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কলকাতায় নিখিল ভারত সোশিয়ালিস্ট যুবক কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদান, কবি গোলাম মোস্তফার নজরুল-বিরোধিতা।
ডিসেম্বরের শেষে কৃষ্ণনগর থেকে নজরুলের কলকাতা প্রত্যাবর্তন এবং প্রথমে ১১নং ওয়েলেস্‌লি স্ট্রিটে ‘সওগাত’ অফিস সংলগ্ন ভাড়া বাড়িতে ও পরে ৮/১ পান বাগান লেনে ভাড়া বাড়িতে বসবাস। নজরুলের সঙ্গে গ্রামোফোন কোম্পানির যোগাযোগ।
    ১৯২৯
জানুয়ারিতে এলবার্ট হলে নজরুলকে জাতীয় সম্বর্ধনা প্রদান, উদ্যোক্তা ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, হবীবুল্লাহ্‌ বাহার প্রমুখ। সংবর্ধনা সভায় সভাপতি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রধান অতিথি সুভাষচন্দ্র বসু।
    ১৯৩০
‘প্রলয়শিখা’ প্রকাশ ও কবির বিরুদ্ধে মামলা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড। কিন্তু গান্ধি-আরউইন চুক্তির ফলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ফলে কারাবাস থেকে মুক্তি। কবির প্রিয় পুত্র বুলবুলের মৃত্যু।
    ১৯৩১
সিনেমা ও মঞ্চ-জগতের সঙ্গে যোগাযোগ।
‘আলেয়া’ গীতিনাট্য রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ। নজরুলের অভিনয়ে অংশগ্রহণ।
    ১৯৩২
নভেম্বরে সিরাজগঞ্জে ‘বঙ্গীয় মুসলিম তরুণ সম্মেলনের’ সভাপতিত্ব।
ডিসেম্বরে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনের’ পঞ্চম অধিবেশনে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন।
    ১৯৩৩
গ্রীষ্মে ‘বর্ষবাণী’ সম্পাদিকা জাহান আরা চৌধুরীর সঙ্গে দার্জিলিং ভ্রমণ ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ‘ধ্রুব’ চিত্রে নারদের ভূমিকায় অভিনয়, সঙ্গীত পরিচালনা।
    ১৯৩৪
গ্রামোফোন রেকর্ডের দোকান ‘কলগীতি’ প্রতিষ্ঠা।
    ১৯৩৬
ফরিদপুর ‘মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনের কনফারেন্সে’ সভাপতিত্ব।
    ১৯৩৮
এপ্রিলে, কলকাতায় ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে’ কাব্য শাখার সভাপতিত্ব।
ছায়াচিত্র ‘বিদ্যাপতি’র কাহিনী রচনা।
    ১৯৩৯
ছায়াচিত্র ‘সাপুড়ে’র কাহিনী রচনা।
    ১৯৪০
কলকাতা বেতারে ‘হারামণি’, ‘নবরাগ মালিকা’ প্রভৃতি নিয়মিত সঙ্গীত অনুষ্ঠান প্রচার। লুপ্তরাগ রাগিণীর উদ্ধার ও নব রাগিণীর প্রচার অনুষ্ঠান দুটির বৈশিষ্ট্য।
অক্টোবর মাসে, নব পর্যায়ে প্রকাশিত ‘নবযুগে’র প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত। ডিসেম্বরে কলকাতা মুসলিম ছাত্র সম্মেলনে ভাষণ।
প্রমীলা নজরুল পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত।
    ১৯৪১
মার্চে, বনগাঁ সাহিত্য-সভার চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব।
৫ই ও ৬ই এপ্রিল নজরুলের সভাপতিত্বে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র রজত জুবিলি উৎসবে সভাপতিরূপে জীবনের শেষ ভাষণ দান, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’।
    ১৯৪২
১০ই জুলাই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। ১৯শে জুলাই, কবি জুলফিকার হায়দারের চেষ্টায়, ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আর্থিক সহায়তায় নজরুলের বায়ু পরিবর্তনের জন্য ডক্টর সরকারের সঙ্গে মধুপুর গমন। মধুপুরে অবস্থার অবনতি। ২১শে সেপ্টেম্বর মধুপুর থেকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন।
অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ডা. গিরীন্দ্রশেখর বসুর ‘লুম্বিনী পার্কে’ চিকিৎসার জন্য ভর্তি। অবস্থার উন্নতি না ঘটায় তিন মাস পর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন। কলকাতায় নজরুল সাহায্য কমিটি গঠন।
সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ— ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মূখোপাধ্যায়
যুগ্ম সম্পাদক— সজনীকান্ত দাস ও জুলফিকার হায়দার
কার্যনির্বাহী কমিটির সভ্য—
এ. এফ. রহমান
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বিমলানন্দ তর্কতীর্থ
সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার
তুষারকান্তি ঘোষ
চপলাকান্ত ভট্টাচার্য
সৈয়দ বদরুদ্দোজা
গোপাল হালদার
এই সাহায্য কমিটি কর্তৃক পাঁচ মাস কবিকে মাসিক দুইশত টাকা করে সাহায্য প্রদান।
    ১৯৪৪
বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার ‘নজরুল-সংখ্যা’ (কার্তিক-পৌষ ১৩৫১) প্রকাশ।
    ১৯৪৫
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নজরুলকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রদান।
    ১৯৪৬
নজরুল পরিবারের অভিভাবিকা নজরুলের শাশুড়ি গিরিবালা দেবী নিরুদ্দেশ। নজরুলের সৃষ্টিকর্ম মূল্যায়নে প্রথম গ্রন্থ কাজী আবদুল ওদুদ কৃত ‘নজরুল-প্রতিভা’ প্রকাশ। গ্রন্থের পরিশিষ্টে কবি আবদুল কাদির প্রণীত নজরুল-জীবনীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা সংযোজিত।
    ১৯৫২
‘নজরুল নিরাময় সমিতি’ গঠন। সম্পাদক কাজী আবদুল ওদুদ। জুলাই মাসে নজরুল ও তাঁর পত্নীকে রাঁচি মানসিক হাসপাতালে প্রেরণ। চার মাস চিকিৎসা, সুফলের অভাবে কলকাতা আনয়ন।
    ১৯৫৩
মে মাসে কবি ও কবিপত্নীকে চিকিৎসার জন্যে লন্ডন প্রেরণ। মানসিক চিকিৎসক উইলিয়ম স্যারগন্ট, ই.এ. বেটন, ম্যাকসিক্‌ ও রাসেল ব্রেনের মধ্যে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যাপারে মতভেদ, ডিসেম্বর মাসে নজরুলকে ভিয়েনাতে প্রেরণ। ভিয়েনায় বিখ্যাত স্নায়ুচিকিৎসক ডা. হ্যান্স হফ্‌ কর্তৃক সেরিব্রাল অ্যানজিওগ্রাফি পরীক্ষার ফল, নজরুল ‘পিকস ডিজিজ’ নামে মস্তিস্ক রোগে আক্রান্ত এবং তা চিকিৎসার বাইরে। ডিসেম্বর মাসে নজরুল ও তাঁর পত্নীকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
    ১৯৬০
ভারত সরকার কর্তৃক নজরুলকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি দান।
    ১৯৬২
৩০শে জুন নজরুল-পত্নী প্রমীলা নজরুলের দীর্ঘ রোগ ভোগের পর পরলোক গমন। প্রমীলা নজরুলকে চুরুলিয়ায় দাফন। (নজরুলের দুই পুত্র কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ ইসলামের মৃত্যু যথাক্রমে ১৯৭৪ ও ১৯৭৯ সালে।)
    ১৯৬৬
কবি আবদুল কাদিরের সম্পাদনায় ঢাকার ‘কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড’ কর্তৃক ‘নজরুল-রচনাবলী’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত।
    ১৯৬৯
সম্বিতহারা কবির অসুস্থতার সপ্তবিংশ বৎসর পূর্ণ এবং সর্বত্র কবি কাজী নজরুল ইসলামের সপ্ততিতম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডি. লিট. উপাধি প্রদান।
    ১৯৭১
২৫শে মে নজরুল জন্মবার্ষিকীর দিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিচালক প্রবাসী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নব পর্যায়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার শুরু।
    ১৯৭২
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নজরুল-জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে নজরুলকে সপরিবার ঢাকায় আনয়ন, ধানমন্ডিতে কবিভবনে অবস্থান এবং সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড্ডীন। স্বাধীন বাংলাদেশে কবির প্রথম জন্মবার্ষিকী কবিকে নিয়ে উদ্‌যাপন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কবিভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
    ১৯৭৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডি. লিট. উপাধি প্রদান। কবিপুত্র কাজী সব্যসাচী ইসলামের মৃত্যু।
    ১৯৭৫
২২শে জুলাই কবিকে পি. জি. হাসপাতালে স্থানান্তর, ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট মোট এক বছর এক মাস আট দিন পিজি হাসপাতালের ১৯৭নং কেবিনে নিঃসঙ্গ জীবন।
    ১৯৭৬
২১শে ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদক’ প্রচলন ও নজরুলকে পদক প্রদান।
ঐ বছরেই আগস্ট মাসে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি। ২৭শে আগস্ট শুক্রবার বিকেল থেকে কবির শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তিনি ব্রঙ্কো-নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। ২৯শে আগস্ট রবিবার সকালে কবির দেহের তাপমাত্রা আস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে ১০৫ ডিগ্রি অতিক্রম করে যায়। কবিকে অক্সিজেন দেওয়া হয় এবং সাক্‌শান এর সাহায্যে কবির ফুসফুস থেকে কফ ও কাশি বের করার চেষ্টা চলে। কিন্তু চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও কবির অবস্থার উন্নতি হয় না—সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১২ই ভাদ্র ১৩৮৩ সাল মোতাবেক ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেতার এবং টেলিভিশনে কবির মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হলে পিজি হাসপাতালে শোকাহত মানুষের ঢল। কবির মরদেহ প্রথমে পিজি হাসপাতালের গাড়ি বারান্দার ওপরে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-র সামনে রাখা হয়। অবিরাম জনস্রোত কবির মরদেহে পষ্প দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
কবির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাদ আসর সোহ্‌রাওয়ার্দি উদ্যানে। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষ শামিল হন। নামাজে জানাজা শেষে শোভাযাত্রা সহযোগে কবির জাতীয় পতাকা শোভিত মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। কবির মরদেহ বহন করেন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম. এইচ. খান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ. জি. মাহমুদ, বি. ডি. আর. প্রধান মেজর জেনারেল দস্তগীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। পরবর্তী কালে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয় ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৯৮-২০০০ সাল বিশ্বব্যাপী মহাসমারোহে নজরুল-জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।
Read More

Post Top Ad